দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব:
ভূমিকা:
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি যেনো এক ভয়ংকর বাক্য- নিম্মবিত্ত , মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে। আমাদের দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পায় কারণে অকারণে। রমজান মাস আসলে কিংবা ঈদ কুরবান আসলে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করা যেনো বিক্রেতাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হয়ে পড়ে। দিনের পর দিন দৈনন্দিন ব্যবহৃত পণ্যদ্রব্যের মূল্য মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এতে দূর্বিসহ হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষের জীবনযাত্রা।
দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় পণ্য কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। করোনা মহামারীর সামাল দিতে না দিতেই শুরু হয়েছে রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধ ।তার ফলশ্রুতিতে চাল , ডাল, তেল,আটা,মাছ-মাংস , ডিম, শাক-সবজিসহ দাম বেড়েছে আরো নানান নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে বিভিন্ন পাবলিক ট্রান্সপোর্টের ভাড়া।প্রতিটি প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে ২০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত ।
উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস:
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য অনেকগুলো কারণ জড়িত । তারমধ্যে একটি হলো উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস। একজন উৎপাদকের উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পায় নানান কারণে, এরমধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পূঁজির অভাব , রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অথবা প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহে ব্যর্থ হওয়া । রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে আমাদের দেশে অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উৎপাদক পর্যাপ্ত পরিমাণে কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারছে না।
যার ফলশ্রুতিতে উৎপাদন কম হচ্ছে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও বাড়ছে ডলারের মান ।যেসকল উদ্যোক্তারা পণ্যদ্রব্য আমদানি করে তাদের খরচের পরিমাণ পড়ে যাচ্ছে বেশি। যার কারণে পণ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও রাজনৈতিক অস্থিরতা , স্থানীয়দের মধ্যে দাঙ্গাতো রয়েছেই। আরো আছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ।যার কারণে সমুদ্রের উপকূলীয় এলাকার মানুষ পণ্য উৎপাদন করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি:
মহামারীর পর শিল্পের কাঁচামালের চাহিদা বাড়ছে।যে হারে চাহিদা বাড়ছে সে হারে বাড়ছে না জোগান। যার ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে কাঁচামালের দাম। শিল্পের বিভিন্ন কাঁচামাল যেমন রড় , সিমেন্ট, বালি , ইট ইত্যাদির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। এছাড়াও ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বৃদ্ধি পাচ্ছে জাহাজ ভাড়াসহ আরও নানান রকমের আনুষঙ্গিক খরচ।
যার ফলে শিল্পের কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে বিক্রি কমে যাচ্ছে। এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন শিল্প মালিকরা। তাদের মতে এভাবে চলতে থাকলে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক নাহলে বিক্রি কমে এক সময় তাদের ব্যবসা বন্ধ করতে হবে যা দেশের অর্থনীতিকে খুবই সূচনীয় অবস্থায় ফেলবে।
উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা বেশি:
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির পেছনে আরো একটি কারণ হচ্ছে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ক্ষমতা কম। আমদানি রপ্তানি হ্রাস, কর্মসংস্থান হারানো, বিভিন্ন রাজনৈতিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে পৃথিবীর প্রায় বিভিন্ন অনুন্নত,উন্নয়নশীল দেশের উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। এছাড়াও অসাধু ব্যবসায়ীদের মজুদদারি, কালোবাজারির কারণেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
উৎপাদন ক্ষমতার তুলনায় শ্রমিকের মজুরি বেশি:
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে শুধু যে খেটে খাওয়া মানুষই কষ্টে আছে তা না, এর ক্ষতিকর প্রভাবও পড়ছে উচ্ছবিত্ত শ্রেণীর মানুষের উপর। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিক শ্রমিক কর্মচারীদের মজুরি/বেতন পর্যন্ত সময়মতো দিতে পারছে না। নিম্নবিত্ত মানুষের অবস্থাতো আর নাই বললাম।
তারা তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য পর্যন্ত কিনতে পারছে না। শহরের অনেক নিম্নবিত্ত পরিবার তাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ করে গ্ৰামে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।অনেকেই আবার চাকরি হারাচ্ছে।
মন্তব্য:
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে এখনই সরকারের জরুরী পদক্ষেপ গ্ৰহণ করা দরকার। আমাদের দেশের পণ্যের চাহিদা এবং জোগানের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। সরকারের পণ্য বাজারের উপর দৃষ্টি রাখা উচিৎ। অসাধু ব্যবসায়ীরা যেনো পণ্যের কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টি করে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অসৎ , দূর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের কঠোর আইনের আওতায় আনতে হবে।
– জান্নাতুল ফেরদৌস
>> অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা ফেরাতে ইসলামী অর্থব্যবস্থা
যোগাযোগ: Faysal’s Education Counsel